ঢাকা , সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫ , ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সোনারগাঁওয়ে বিকল্প সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ চলাচলে চরম ভোগান্তি ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করেছে এনবিআর বাংলাদেশকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি ডিএসইতে লেনদেন ছাড়ালো ১১০০ কোটি টাকা গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অস্ট্রেলিয়ায় লাখো মানুষের বিক্ষোভ রাশিয়ায় ৬০০ বছর পর বিরল অগ্ন্যুৎপাতের জেরেই ভূমিকম্প কৃষ্ণ সাগরের কাছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পাল্টাপাল্টি হামলা তবুও কাটছে না খাদ্য সংকট চুয়ামেনিকে ছাড়ছে না রিয়াল, ফিরিয়ে দিল হাজার কোটির প্রস্তাব ডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিকে শিরোপা দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ বলে রুদ্ধশ্বাস জয়: পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজে সমতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ মার্তার জাদুতে ইতিহাস গড়ল ব্রাজিল: নাটকীয় ফাইনালে কোপা আমেরিকার নবম শিরোপা মেসির চোটে ছিটকে যাওয়ার পরও টাইব্রেকারে দুর্দান্ত জয় মায়ামির স্থগিত পাকিস্তান-আয়ারল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক সফর নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান দানি ওলমো এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সব ম্যাচ আবুধাবিতে, ফাইনাল দুবাইয়ে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ হাসপাতাল ভাঙচুর এখনো ভয় কাটেনি মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের ৪ টেরাবাইট ব্যান্ডউইডথের মাইলফলকে বাংলাদেশ সাবমেরিন অন্তর্বর্তী সরকারের মাঝে শেখ হাসিনার ছায়া দেখা যাচ্ছে-আনু মুহাম্মদ

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি বাংলাদেশ

  • আপলোড সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৪:১৫:৩০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-০৮-২০২৫ ০৪:১৫:৩০ অপরাহ্ন
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি বাংলাদেশ
অপরূপ নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি বাংলাদেশ। এদেশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, পুরাকীর্তি ও সম্পদ, প্রবালদ্বীপ, ঝর্ণা, বন, পাহাড়, চা বাগান, হাওর-বিল, নিঝুম দ্বীপসহ অসংখ্য পর্যটক আকর্ষনীয় স্থান হয়েও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এ শিল্প খাতটি। সংশ্লিষ্ট্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি আর বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পর্যটন অপরিহার্য মাধ্যম। এই পর্যটনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশ প্রমাণ করেছে পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ তাদের পর্যটন খাতকে আকর্ষণীয় করে ব্যাপক অর্থ উপার্জন ও কর্মসংস্থান করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এমনকি এ ব্যাপারে অনেক দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতাও চলছে, হচ্ছে। ফলে অনেক দেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ হয়ে উঠছে পর্যটন খাত। পর্যটক আকর্ষণে একটি দেশ কতটা নিরাপদ, অবকাঠামো সুবিধা কেমন, বিমান বন্দর কতটা উন্নত, আবাসন ব্যবস্থার মান কেমন, খাবারের মান কেমন, ভিসা ব্যবস্থা কেমন, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ মোটা দাগে এমন কয়েকটি বিষয় বা সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের অবস্থা বিশ্ব পর্যায়ে দুর্বল এবং পর্যটক আকর্ষণে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর একটি। জানা গেছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। বাংলাদেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে গেছে। এজন্য বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটি সমভাবাপন্ন। মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দেশের জলবায়ুর ওপর এত বেশি যে, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঋতুতে জলবায়ুর কিছুটা তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালীন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দেশের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় ২০৩ সেন্টিমিটার। পশ্চিমাংশ অপেক্ষা পূর্বাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। বর্ষাকালে আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের মোট বৃষ্টিপাতের পাঁচভাগের চারভাগই বর্ষাকালে হয়ে থাকে। শীতকালে উত্তর-পূর্ব শুকনো মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশের উত্তরে ভাওয়াল ও মধুপুর গড়। গেরুয়া রঙের মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গজারি গাছ। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর সুন্দরবন। পূর্বে পাহাড়ের কোলঘেঁষে সাজানো চা-বাগান। এরই মাঝে বিশাল সব ছায়াবৃক্ষ। পশ্চিমে ধু-ধু প্রান্তর। প্রকৃতির রুক্ষতার মাঝেও এখানে দেখা যায় সারি সারি আম্রকানন, আখের খেত কিংবা পানের বরজ। বাংলাদেশের সুন্দরবন সুন্দরী গাছের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজারের সমুদ্র উপক‚ল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৈকত। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে সীমাহীন সৌন্দর্যের সমাবেশ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর পাহাড়ের কোলঘেঁষে আদিবাসীদের বসবাস। হাতেগোনা শহরগুলো বাদ দিলে বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। গ্রামের সৌন্দর্যে কোনো কৃত্রিমতা নেই। যতদূর দৃষ্টি যায়, শুধু মাঠ আর মাঠ। প্রকৃতিগত অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশ বলা যায়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছোট-বড় অসংখ্য নদী এ দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। প্রতিবছর বন্যায় এ নদীগুলো পলিমাটি বহন করে। এ কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল পলিমাটি দিয়ে গঠিত। পলি মাটির উর্বরতার কারণে এ দেশে ভালো ফসল জন্মায়। এ দেশের প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ মÐলে অবস্থিত। এ দেশের ওপর দিয়ে ক্রান্তীয় মৌসুমি বায়ু বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় প্রবাহিত হয়। ফলে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। এ দেশে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেশি শীত ও এপ্রিল-মে মাসে গরম বেশি থাকে। তবে প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের কারণে যেভাবে সমস্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু এ দেশের ওপর দিয়ে বছরের অধিকাংশ সময়ই প্রবাহিত হয়। ফলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বায়ু প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে এ দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ু প্রচুর জলীয় বাষ্প বহন করে। ফলে গ্রীষ্মের শেষে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পৃথিবীর মানচিত্রে এশিয়ার ছোট্ট, সবুজ ভ‚মি বাংলাদেশ। এর নদী-নালা, খাল-বিল, এর পাহাড়-টিলা, বন-বনানী, এর সমতল ভ‚মি মিলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এক বিচিত্র রূপের অপূর্ব সমারোহ। প্রকৃতির রূপসী কন্যা আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে চমৎকারভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। বারো মাসে ছয় ঋতুর এ দেশে প্রতিটি ঋতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করে এবং নিজের অনাবিল সৌন্দর্য উপহার দিয়ে বিদায় নেয়। সারাটি বছর নব নব রূপের মধ্যে আমাদের বসবাস। প্রকৃতি পাল্টায়। আকাশ রং বদলায়। আমাদের মনের আকাশেও লাগে তার ছোঁয়া। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ, অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তের নিয়ত লীলা এর নিসর্গকে দিয়েছে বিচিত্র বিভ‚তি। এ বিষয়ে দৈনিক ভোরের ডাকের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও পর্যটক বিশ্লেষক ইমরুল কাওসার ইমন বলেন, আমরা পর্যটকদের আকর্ষিত করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যটনমেলা, বিভিন্ন দেশে রোড-শো ইত্যাদি করি বিপুল অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হয়, পর্যটন এলাকায় ও যাতায়াত যদি নিরাপদ না হয়, বিনোদন যদি ফ্রি না হয়, ভালো দোভাষী যদি না থাকে, একটু বৃষ্টি হলেই যদি সব তলিয়ে যায় পানিতে, তাহলে কি কেউ আসবে এ দেশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে? ইতিহাস জানতে? পর্যটন শিল্পের ভিত মজবুত করতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনসহ সরকারি-বেসরকারি সকল সংস্থা এবং দূতাবাসগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে এ খাতের বিদ্যমান সমস্যা দ্রæত সমাধান করে এ শিল্পের সবটুকু সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিশ্ব পর্যটনে আদর্শ হয়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা। বর্ষায় নিকলী হাওরে প্রকৃতির অপার রূপমাধুর্য : কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত নিকলী হাওর যেন বর্ষায় প্রকৃতির এক অপূর্ব লীলাভ‚মিতে রূপ নেয়। মৌসুমি এ হাওর প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে, আর তখনই এর প্রকৃত সৌন্দর্য যেন প্রকাশ পায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টি নিকলী হাওর ভ্রমণের জন্য আদর্শ। এ সময় দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুরা। ট্র্যাডিশনাল নৌকায় ভেসে বেড়িয়ে হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি আর আকাশের মেলবন্ধন যেন দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে তোলে। অনেকেই হাওরের শীতল পানিতে স্নান করে এক ভিন্নমাত্রার আনন্দ উপভোগ করেন। নিকলীর সৌন্দর্য শুধু বর্ষাকালেই সীমাবদ্ধ নয়। বসন্তকালেও (মার্চ থেকে মে) হাওরের চারপাশে নানা রঙের ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে গ্রামীণ প্রাকৃতিক দৃশ্য। যদিও এ সময় হাওরে পানির পরিমাণ কম থাকে, তবে তার সৌন্দর্যে কোনো ভাটা পড়ে না। গ্রামীণ পরিবেশ, শান্ত-নিরিবিলি প্রকৃতি আর মন ছুঁয়ে যাওয়া সৌন্দর্যের জন্য নিকলী হাওর এখন হয়ে উঠেছে ভ্রমণপ্রেমীদের প্রিয় গন্তব্য। দেশের প্রাকৃতিক ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল নাম। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি সোনার চর : বাংলাদেশের অপার এক সৌন্দর্যের নাম সোনার চর। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা অপরূপ প্রাকৃতিক এক লীলাভ‚মি। পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার দক্ষিণে সীমান্ত ঘেঁষে এই চরের অবস্থান। ১০ হাজার একর আয়তনের চরটি দুর্গম হলেও প্রকৃতিক সৌন্দর্যের কমতি নেই। সুন্দরবন বা কুয়াকাটা নামের পেছনে যেমন একটি গল্প আছে, তেমনি সোনার চরের নামের পেছনেও কারণ আছে। চরটি সোনা দিয়ে তৈরি না হলেও সূর্যের প্রখর রোদ যখন বালুর ওপর পড়ে তখন সোনার মতোই মনে হয়। লোকের মুখে মুখে নামটি জনপ্রিয়তা পায়। ফলে একসময় এটি প্রশাসনিক নামে রূপ নেয়। পটুয়াখালী প্রশাসনের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ২০০৪ সালে বঙ্গোপসাগরের কোল জুড়ে জেগে ওঠে চরটি। আয়তনের দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশাল সমুদ্র সৈকত। ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ২০ হাজার ২৬ হেক্টর আয়তনের এই বনভ‚মিকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর থেকেই বনায়ন শুরু করে বন কর্তৃপক্ষ। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে সোনারচর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার। যেতে যেতে দেখতে পাবেন সাগরের অপরূপ দৃশ্য। ছোট-ছোট নৌকা চলছে বড়-বড় ঢেউয়ের তালে। বিভিন্ন ধরনের জাল ফেলে মাছ ধরছে জেলে। সাগর থেকে আসা খালগুলোতে মাকড়শার মত অসংখ্য ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরছে শিশুরা। সাগরে যখন জোয়ারের জল উথলে ওঠে তখন চাঁদের আলোয় অন্য এক সৌন্দর্যে রূপ নেয় সোনার চর। ঢাকার পাশেই ‘পদ্মার পাড়ে মৈনট ঘাট’ মিনি কক্সবাজার : ঢাকার দোহার উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যানজট ও কোলাহল মুক্ত স্থান হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিয়াসী দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলা ভ‚মি মিনি কক্সবাজার এখন দর্শনার্থীদের পদচারণায় উৎসবমুখর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন গুলোতে নিয়মিত পর্যটকদের উপচে পড়া ভীরে থাকে ভিন্ন আমেজ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে ঘুরতে আসেন পর্যটকরা। কেউবা পরিবার পরিজন, আবার কেউ প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে বিনোদনের জন্য এখানে ঘুরতে আসেন। যা পুরো মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট এলাকাটিকে সৌন্দর্যময় ও সৌন্দর্যবর্ধন করে তোলে। এখানে এসে পর্যটকরা স্পিডবোট, নৌকা ভ্রমন, ঘোড়ার গাড়িতে ভ্রমণ, কেউবা আবার পদ্মার পানিতে হেঁটে অনেক দূর চলে যাওয়া কিংবা গোসল করে তৃপ্তি মেটান। আবার কেউ পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ছবি তুলেও আনন্দ উপভোগ করেন। এছাড়াও বাচ্চাদের খেলা ও আনন্দের জন্য রয়েছে বিভিন্ন উপকরণ। এই মৈনটঘাটে পর্যটকরা এলে মুগ্ধ হবেন এটাই বাস্তাবতা। কারণ এখানে রয়েছে পদ্মা নদীর অপরূপ জলরাশি যা আপনাকে চোখ ফেরাতেই দেবে না। এই বিশাল জলরাশি, পদ্মায় হেলে দুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা দেখা আর পদ্মার তীরে হেঁটে বেড়ানো, সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি এখন ঢাকার দোহারে মৈনটঘাটে নয়, বরং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতেই আছেন। মূলত এ কারণেই অনেকে মৈনটঘাটকে বলে থাকেন ছোট কক্সবাজার বা মিনি কক্সবাজার। পর্যটকদের ভিড়ে এই এলাকার মানুষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ফিরে পেয়েছেন জীবিকা নির্বাহের সুন্দরতম গতিপথ। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, চটপটি ও ফুচকা হাউজসহ নানা ধরনের খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক উপকরণের দোকান। যা ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বিনোদনের পাশাপাশি খাবার খাওয়া ও অন্যান্য জিনিস ক্রয় করতেও ব্যস্ত থাকেন। মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনটঘাট ঢাকার কাছে হওয়ায় এবং দিনে এসে দিনেই ফিরে যাওয়া যায় বিধায় মৈনটঘাট ভ্রমণ পাগল মানুষের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থী জানান, আমি অনেকের কাছেই এই মিনি কক্সবাজার মৈনটঘাটের সৌন্দর্যের কথা শুনেছি। বন্ধুদের সাথে এখানে ঘুরতে এলাম। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। অনেক সুন্দর একটি জায়গা। তবে মৈনটঘাটের একজন স্প্রিডবোট চালক মো. রেজুয়ান জানান, ২০ মিনিটের জন্য স্প্রিডবোট রিজার্ভ করে পদ্মায় ভেসে বেড়াতে চাইলে গুনতে হবে দুই হাজার টাকা। কয়েকজন মিলে শেয়ারে ভাড়া করলে ভালো হবে। আর ১০ মিনিটের জন্য এক হাজার টাকা। ট্রলার রিজার্ভ করে পদ্মায় ঘুরতে চাইলে এক ঘণ্টার জন্য ১ হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ বলেন, পর্যটন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ট্রাভেল এজেন্সি। আর দেশের সেই শিল্পকে এগিয়ে নিতে দীর্ঘদিন ধরে আমরা কাজ করে আসছি। তিনি বলেন, দেশের পর্যটন খাতের বিকাশে সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এই খাতে বিনিয়োগ, উন্নত অবকাঠামো, দক্ষ জনবল এবং পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। এছাড়াও, পর্যটন শিল্পের প্রচার ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত বলে জানান তিনি। মানুষের একে অন্যকে জানার আগ্রহ থেকে ঘটেছে পর্যটনশিল্পের বিকাশ। মানুষের এই দুর্নিবার ভ্রমণাকাক্সক্ষা থেকেই পর্যটনশিল্পের উৎপত্তি। সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটনের রূপ ও প্রকৃতিতে এসেছে অভাবিত পরিবর্তন। পর্যটন এখন শুধু কোনো ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর দেশ ভ্রমণ নয়, বরং সমগ্র মানবগোষ্ঠীর জন্য একটি বিশ্বজনীন শখ ও নেশা। আর তাই পর্যটন এখন একটি শিল্প, যা অনেক দেশের অর্থনীতির একটি মুখ্য উপাদান। বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন স্থাপনে অনন্য ভ‚মিকা পালন করে আসছে পর্যটনখাত।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স